যুগের পর যুগ কেটে যায় কিন্তু প্রাচীন ইতিহাস কোথাও না কোথাও তার মহিমা ঠিক রেখে যায়। আমরা ছোট বেলায় ইতিহাসে কত মোগল সাম্রাজ্যের কত অধ্যায় পড়েছি কখনও কি ভাবতে পেরেছি সেই কোনো এক মোগল সম্রাটটের বংশধরের দেখা মিলবে তাও এই পশ্চিমবঙ্গের বুকেই।
আজ্ঞে হ্যাঁ, শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের বংশের বেগম সুলতানা তার কথাই বলবো আজ। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ দমনের পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ভারত শাসনের ভার সরাসরি ইংল্যান্ডের রানির হাতে চলে যায়। মোগল শাসনের চিহ্ন মুছে দিতে ভারত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বাহাদুর শাহকে। তিনি তখন সহায়-সম্বলহীন সম্রাট। ঢাল, তরোয়াল, সেনাবাহিনী কিছুই নেই। বিদ্রোহ শেষ বন্দী অবস্থায় বিচারের শেষে নির্বাসনের সাজা ঘোষণা হতেই গরুর গাড়িতে চাপিয়ে বাদশাহ ও তাঁর পরিবারের কয়েক জনকে ইয়াঙ্গন বা তৎকালীন রেঙ্গুনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নয়াদিল্লি থেকে অনেক দূরে ইয়াঙ্গন শহরে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হয় শেষ মোগল সম্রাটের। সেই বাহাদুর শাহের পুত্র জওঁয়া বখ্ত, পৌত্র জামশেদ বখ্ত আর প্রপৌত্র মির্জা মহম্মদ বেদার বখ্ত। পরবর্তী কালে দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে বাংলায় চলে আসেন বেদার বখ্ত। বাহাদুর শাহের বংশধর বেদার বখ্তের বিধবা হলেন এই সুলতানা, যিনি বর্তমানে বসবাস করেন হাওড়ার ফোরশোর রোডের কাছে গঙ্গা-ঘেঁষা এক বস্তিতে। তিনি বলেন, তার ঘরে অভাব অনটন থাকলেও তার বংশপরিচয় অত্যন্ত গৌরবের। তিনি দাবি করেন দিল্লির লালকেল্লা তে তাদের বংশের অংশীদারি আছে। তারা সব দিক থেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। হাওড়াবাসী সুলতানার খবর সে ভাবে কেউ না রাখলেও বছর তিনেক আগে তিনি ভারত সরকারের বিরুদ্ধেই একটি মামলা করে শিরোনামে এসেছিলেন। আদালতে দাবি করেছিলেন, লাল কেল্লায় তাঁদের অংশের ক্ষতিপূরণ চাই। দিল্লি হাইকোর্ট সেই মামলা গ্রহণই করেনি। ওই মামলা নেওয়া মানে ‘সময় নষ্ট’ জানিয়ে খারিজ করে দেওয়া হয় সুলতানার দাবি। তা বলে দমে যাননি সুলতানা। বললেন, হাঁটুর ব্যথায় এখন ওঠাবসাও কষ্টের। হাতে কিছু টাকাপয়সা এলে চিকিৎসা করিয়ে আবার মামলা করবেন। নতুন আইনজীবী নেওয়ারও ইচ্ছা রয়েছে।
তাঁর বক্তব্য লাল কেল্লার ‘ভাগ’ তাদেরও আছে। কেন আছে তাদের ভাগ সে কথা জানতে চাইলে বলেন সুলতানা, ‘‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সব রাজবংশেরই বড় বড় প্রাসাদ রয়েছে। অনেক টাকা পেনশন। কিন্তু আমাদের কিছুই দেওয়া হয়নি।’’ রাগত স্বরে বলে গেলেন, ‘‘যে বংশ তাজমহল বানিয়েছে, তারই লোক হয়ে আমি বস্তিতে থাকি!’’
তবে বাহাদুর শাহের বংশধর বেদার বখ্তের বিধবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের থেকে ‘সুলতানা’ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। মাসে মাসে ছ’হাজর টাকা পেনশন পান তিনি। ১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পরে পেতেন ৪০০ টাকা। এখন তার পরিমাণ বেড়েছে। তবে শেষ বার বেড়েছিল সেই ২০১০ সালে। সে-ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের কাছে দরবার করার পরে। এখন তাঁর বড় অর্থের টানাটানি। সুলতানা বললেন, ‘‘মাথার কাপড় ঢাকতে গেলে পা বেরিয়ে যায়। আর পা ঢাকতে গেলে মাথা। ওইটুকু টাকায় হয় নাকি!’’
তবে রাজ্যের বিধবা ভাতা সে নেয় না বলেন এতে যদি দিল্লি থেকে টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি তাকে নিয়ে বা তার বংশ পরিচয় নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন কলকাতার এক পরিচালক। কথাবার্তা পাকা। সুলতানা বললেন, ‘‘শুটিংয়ের সময়ে দিল্লি নিয়ে গেলে এক বার লাল কেল্লা ঘুরে আসব। ওটা তো আমাদের বংশেরই।’’ পরিচালক সৌম্য সেনগুপ্ত যে ছবিটি বানাচ্ছেন তার নাম ‘দ্য লস্ট কুইন’। সৌম্য বলেন, ‘‘ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পরে তাঁকে ‘হিন্দুস্থানের স্বাধীন বাদশাহ’ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই ইতিহাস অনেকের জানা থাকলেও বাদশাহের উত্তরসূরিদের খোঁজ রাখে না কেউ। সেই কারণেই সুলতানাকে নিয়ে ছবি বানানোর ভাবনা। খুব তাড়াতাড়িই শুটিং শুরু করার ইচ্ছা আছে।’’
[আরো পড়ুন:👉চাঁদে এখন সময় কত! কীভাবে চাঁদের সময় নির্ধারণ করা হয় আসুন জেনে নেওয়া যাক!]