গত ১১ই মে একটি বিশাল সৌর ঝড় পৃথিবীতে আঘাত হানে। কি এই সূর্য ঝড়? কতটা মারাত্মক এর প্রভাব?
মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে সূর্যের অবদান অনস্বীকার্য। সূর্যের শক্তি হলো সমস্ত শক্তির উৎস। সৌরশক্তিই রূপান্তরিত হচ্ছে যাবতীয় অন্যান্য শক্তিতে। ভারতীয় সাংস্কৃতিতে প্রাচীন যুগ থেকেই সূর্যের উপাসনা করে মানবগণ। বর্তমান যুগেও সূর্য কে কেন্দ্র করে নানান পরীক্ষামূলক গবেষণায় রত বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কি হবে যদি সূর্যই কোনো দিন পৃথিবীর বুকে আঘাত হানে?
সৌর ঝড় কি?
সূর্য হলো একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড। সমস্ত রকম গ্যাস, কঠিন পদার্থ সর্বদাই ফুটন্ত আকারে আছে। তাই সূর্যপৃষ্ঠে ও এর বায়ুমন্ডলে সবসময় কিছু না কিছু ঘটে চলেছে। যেমন সূর্যপৃষ্ঠে হওয়া বিস্ফোরণ। যার ফলে বেরিয়ে আসে প্রচন্ড গতিশীল শক্তির প্রবাহ। এটি সূর্যের চৌম্বকীয় আকর্ষণের বিপরীতে ছুটে যায়। বা সহজে বলতে গেলে এটি সূর্য থেকে সামনের দিকে তীব্র গতি তে এগিয়ে যায়। এই তীব্র গতিময় শক্তির প্রবাহ কেই এক কথায় সৌর ঝড় বলে।
এই শক্তি প্রবাহের মধ্যে থাকে ফ্লেয়ার (Flares), প্রমিনেন্স (Prominence), সানস্পট (Sunspots) এবং করোনাল মাস ইজেকশন (Coronal Mass Ejections) বা সিএমই (CME)। এগুলির মধ্যে সঞ্চিত চৌম্বকশক্তি সূর্যের গরম গ্যাসকে আরো সক্রিয় করে তোলে। সৌর ঝড় যখন পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে চলে আসে তখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে এটির ঘর্ষণ হয়।
এর প্রভাব কি?
আজ পর্যন্ত এই ব্যাপক সৌর ঝড় পৃথিবী পৃষ্টে পুরোপুরি প্রভাব ফেলতে পারে নি। কারণ পৃথিবীর বায়ুমন্ডল প্রতিবারই এর মোকাবিলা করেছে। কিন্তু সমস্যা যে হয় না বা দুশ্চিন্তার কারণ যে নেই তা একেবারেই নয়। সৌর ঝড় এর প্রভাব পরে আমাদের যোগাযোগ ব্যাবস্থায়।
একটি সৌর ঝড় পৃথিবীর কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান স্যাটেলাইট গুলিকে ধংস করতে পারে মুহূর্তের মধ্যে। এর ফলে টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নেভিগেশন সিস্টেম ব্যাহত হতে পারে। পাওয়ার গ্রিড ধংস হতে পারে। কোনও বড় অঞ্চল অন্ধকার বা ব্ল্যাকআউট হতে পারে।
এর আগে ২০০৩ সালে একটি শক্তিশালী বিশাল সৌর ঝড় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। তবে তার তুলনায় এই ২০২৪ এর মে মাসের ঝড় টি আরো ব্যাপক ছিল। এমনটাই জানাচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (isro)।
সৌর ঝড় ২০২৪
সূর্যের দক্ষিন-পূর্বে AR13664 নামক একটি সক্রিয় জায়গা থেকে এই ঝড়টি এসেছে। ঝড়টি সত্যিই একটি শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় প্রবাহের সৃষ্টি করেছিল। যা 2003 সালের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ।
এছাড়াও সূর্য থেকে প্রচুর অগ্নিশিখা নির্গত হয়েছিল। এই শিখাগুলি সূর্যালোকের বড় বিস্ফোরণের মতো, তবে খুব শক্তিশালী। কিছু এত শক্তিশালী ছিল যে তারা বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ভারতের অভিনব সৌর মানমন্দির, উদয়পুর সোলার অবজারভেটরি (uso), থেকে এই পুরো ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করা গেছে। এই ঝড়ের ফলে মহাকাশের জিনিসপত্র বিশৃঙ্খল হয়েছে। মহাকাশে স্যাটেলাইট গুলি ধীরগতি হয়ে যায়। কিছু কিছু নিজেদের গতিপথ হারিয়ে ফেলেছিল। ফলত ইন্টারনেট ব্যাবস্থা সাময়িক ভাবে স্লো হয়ে গিয়েছিল।
[আরো পড়ুন:👉যখন সূর্যের থেকেও আকারে বড় এই তারাটি হারিয়ে যায় ! কি হয়েছিল আসুন জেনে নেওয়া যাক]
সৌভাগ্যক্রমে ঝড়ের কারণে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে সমস্ত দেশের মহাকাশ সংস্থা নজর রাখছে, যদি ভবিষ্যতে আরও ঝড় আসে তার উপর।
To view original full report of ISRO click 👇👉 https://www.isro.gov.in/ISRO_CapturesSignaturesRecentSolarEruptive_Events.html
[আরো পড়ুন:👉সময় পেরিয়ে যাওয়ার আগেই ত্বকের যত্ন নিন]
1 thought on “অল্পের জন্য বেঁচে গেল পৃথিবী ! আপনার অজান্তেই ঘটে গেল এই মহাজাগতিক দুর্ঘটনা । আসুন জেনে নেওয়া যাক কি ঘটেছিল ।”