বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো লাল মাটির জঙ্গল এলাকার মানুষ বহুদিন ধরেই খেয়ে আসছেন এই ছত্রাকটি। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের মতে, এটি খেতেও বেশ সুস্বাদু। তা ছাড়া বর্ষায় জ্বর-জারি লেগেই থাকে। কুরকুরে ছাতু খেলে অসুখ থেকে রেহাই মেলে। গবেষকরা এর খাদ্য এবং পুষ্টিগুণের বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, লো ফ্যাট এবং পর্যাপ্ত ফাইবার থাকা এই ছাতুটির সত্যিই অনন্য।
সম্প্রতি কুরকুরা ছাতুর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, লিভার এবং ফুসফুসের ক্যান্সার মোকাবিলায় যথেষ্ট ভালো কাজ করছে এই ছত্রাকটি। লিসমেনিয়াসিসের মোকাবিলা ছাড়াও লিভার, হৃদপিন্ডের সুরক্ষা এবং প্রদাহের উপশমেও কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে তার।
লিসমেনিয়াসিস মোকাবিলায় চালু ওষুধগুলির তুলনায় এই ছত্রাকটি বেশি কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারছে বলেও দাবি বিজ্ঞানীদের। কুরকুরা ছাতুর উপর বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাপত্রগুলি ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একাধিক জার্নালে।
বর্ষাকালে শাল গাছে জন্মায় এই ছত্রাকটি। সাধারণ ভাবে একে ফলস আর্থস্টার নামেও অভিহিত করা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক কৃষ্ণেন্দু আচার্য বলেন, ‘এই ছাতুটির রাসায়নিক চরিত্র বিশ্লেষণ করে দুটি নতুন যৌগের সন্ধান মিলেছে। তার একটির নামকরণ করা হয়েছে অ্যাস্ট্রাকুরকুরোন অন্যটির অ্যাস্ট্রাকুরকুরোল।
দেখা গিয়েছে, ক্যান্সার কোষের মোকাবিলা এবং তার বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে উল্লেখযোগ্য ভালো কাজ করছে এই যৌগ দুটি। শুধু তাই নয়, বেছে বেছে ক্যান্সার কোষগুলিকে মারছে এরা। কিন্তু নিরীহ কোষগুলির উপর তার তেমন কোনও কুপ্রভাব নেই।’ এই গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ওই বিভাগের গবেষক অধিরাজ দাশগুপ্ত এবং সুদেষ্ণা নন্দী জানান, গবেষণাগারে লিভার এবং ফুসফুসের ক্যান্সার কোষের উপর প্রয়োগ করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য মিলেছে। পরবর্তী পর্যায়ের কাজ চলছে ব্রেস্ট ক্যান্সারের উপর।
গত কয়েক বছরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যলয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তরফে গবেষণা চালিয়ে ২৩টি নতুন প্রজাতির ছত্রাক বিজ্ঞানে সংযোজিত করা হয়েছে। তার মধ্যে ২১টিই মিলেছে এ রাজ্য থেকে। এ রাজ্য থেকে নতুন যে ২১ ধরনের ছত্রাক আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে ৮টিই মিলেছে মেদিনীপুর জেলা থেকেই।
নতুন এই ছত্রাকগুলি বাদেও যে ছত্রাকগুলি সাধারণ আদিবাসী মানুষেরা সংগ্রহ করে বিক্রি করেন এবং নিজেরাও খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন, সেগুলির গুণাগুণ খোঁজার কাজ চালানো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। যেমন, কুরকুরা ছাতুর এই গুণের কারণে ভবিষ্যতে এর থেকে ওষুধ তৈরি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যারা এই ছাতুগুলি সংগ্রহ করে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হন, তারা ভবিষ্যতে বিক্রি করে বেশি দাম পেতে পারেন।
প্রচলিত নাম: কুরকুরা ছাতু।
বিজ্ঞানসম্মত নাম: অ্যাস্ট্রিয়াস হাইগ্রোমেট্রিকাস।
জন্মায় ল্যাটেরাইট অঞ্চলে।
শাল গাছে জন্মায় এই ছত্রাকটি।
এতে মিলেছে অ্যাস্ট্রাকুরকুরোন এবং অ্যাস্ট্রাকুরকুরোল নামে দুটি জৈব যৌগ।
বিশেষত লিভার এবং ফুসফুসের ক্যান্সার কোষ মোকাবিলায় এর সাফল্য প্রমাণিত গবেষণাগারে।
এছাড়াও লিভার, হৃদপিন্ডের সুরক্ষা এবং প্রদাহ কমাতে, লিসমেনিয়াসিস মোকাবিলায় এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
খাদ্য হিসেবে এর পুষ্টিগুণও যথেষ্ট বেশি।
কম ফ্যাট এবং যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার রয়েছে এতে।