আমাদের গোটা জগৎ জুড়ে কত ধরনের উদ্ভিদ আমরা রোজ দেখছি। সেই সব উদ্ভিদের কত রকমের উপকারী অংশ থাকে যেগুলো আমাদের মানবদেহের জন্য অনেক কাজে লাগে।
আবার এমন কিছু উদ্ভিদও রয়েছে এই পৃথিবীতে যেগুলো অত্যন্ত বিষাক্ত। বিশেষ করে আমাদের বাংলার আশেপাশে নানান ঝোপ ঝাড়তে যেসব উদ্ভিদ গুলো থাকে তার মধ্যে কিছু বিষাক্ত গাছ পালাও থাকে।
এরই মধ্যে একটি বিষাক্ত গাছ হলো ‘পার্থেনিয়াম’।
এটি এক ধরনের সূর্যমুখী উপজাতির উদ্ভিদ যার জন্ম মেক্সিকোতে কিন্তু বর্তমানে বাংলা তথা সারা ভারতের সর্বত্র ভয়ঙ্কর বিপদজনক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
পার্থেনিয়াম গাছ বাঁচে তিন থেকে চার মাস। এই সময়ের মধ্যেই তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। এই বীজ এতই ছোট যে সাধারণত গবাদি পশুর গোবর, গাড়ির চাকার বা জুতা-স্যান্ডেলের তলার কাদামাটি, সেচের জল ও বাতাসের সঙ্গে এর বিস্তার ঘটে।
[আরো পড়ুন:👉 আমাদের শরীরের ব্লাড গ্রুপ আমাদের শরীরের রোগ বা যেকোনো সমস্যা বুঝতে কিভাবে সাহায্য করে আসুন জেনে নিই ।]
এবার আসুন জেনে নিই এই গাছ কেনো এত ক্ষতিকারক।
পার্থেনিয়ামে রয়েছে Sesquiterpene Lactones নামক টক্সিন বা বিষ যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর। পার্থেনিয়াম আগাছা ফসলি জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে দেয়।
পার্থেনিয়াম আগাছাযুক্ত মাঠে গবাদি পশু চরানো হলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।
পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে হাত-পা চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং পরে ত্বকের ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারে।
শুধু তাই নয় যাদের এলার্জি, হাঁপানি, চর্মরোগ, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি আছে তাদের জন্য এই ফুলের রেণু মারাত্মক। এই আগাছা ৭০ শতাংশ মানুষের চর্মরোগ, ৩০ শতাংশ মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ১২ জন মারা গেছেন। তাই এমন গাছ থাকলে তা জগৎসংসারের জন্য একেবারেই ভালো নয়। তাই এই পার্থেনিয়াম গাছ ধ্বংস করতে হবে।
[আরো পড়ুন:👉 জেনে রাখুন এই সহজ যোগাসন । পেটের সমস্যা লাঘব হবে চটজলদি ।]
আসুন কি উপায়ে এই গাছ ধ্বংস করব আমরা:
১. পার্থেনিয়াম গাছের গায়ে কেরোসিন স্প্রে করলে পার্থেনিয়াম খুব তাড়াতাড়ি মারা যায়। তবে একটু ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে যায় এই উপায়টি। তাই খুব কম খরচে এটি বিনাশ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ৪ থেকে ৫ লিটার জলে ১ কেজি নুন ভালো করে মিশিয়ে গাছের পাতায় ও গোড়াতে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে স্প্রে করলে ২ দিনের মধ্যে পার্থেনিয়াম গাছ মারা যাবে।
সাবধানতা অবলম্বন :
১. পার্থেনিয়াম গাছে কোনো ভাবেই হাত দেবেন না এবং বাচ্চাদের দূরে রাখুন।
২. পার্থেনিয়াম সাফাই অভিযানে সবসময় মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে থাকবেন। এছাড়া ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরে থাকা ভালো।
৩. সাফাইয়ের পর জামাকাপড় ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন ও নিজে স্নান করে তবেই বাড়িতে ঢুকবেন।
আমাদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়েই পার্থেনিয়াম এত দ্রুত বংশবিস্তার করছে। তাই সকলের কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনারা নিজেদের চারপাশ পার্থেনিয়াম মুক্ত রাখুন, এই বিষয়ে সচেতনতা ছড়ান ও নিজেরা সুস্থ থাকুন।
[আরো পড়ুন:👉 ব্যাঙ্কে ঢুকলো কেউটে সাপ বন্ধ হল ব্যাঙ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম]