আজকের পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষ টাকা উপার্জন করার মধ্যে মেতে আছে। কারণ তারা জানে এই জীবনে টাকার মূল্য কতখানি। আজকের দিনে কোন কিছুই জিনিস টাকা ছাড়া পাওয়া যায় না। আমরাও টাকা দিয়ে অনেক শখ আহ্লাদ পূরণ করি। বা ভবিষ্যতে টাকা দিয়ে পূরণ করবো। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে এই টাকা কোথা থেকে আসছে? বা এই টাকা কোথায় তৈরি হচ্ছে? বা এই টাকা করতেই বা কত টাকা খরচ হয়? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে টাকা তৈরী করতে কাগজ ও কালির প্রয়োজন হয়। এই কাগজ এবং টাকা তৈরির কালি আসে কোথা থেকে? টাকা তৈরীর কাগজ এবং কালি আসে বিদেশ থেকে মানে আমাদের এই ভারতের বাইরে থেকে। কারণ আমাদের ভারতের মধ্যে একটি মাত্র শুধু পেপার মিল আছে যেটি টাকা নির্মাণের ক্ষেত্রে কগজ প্রস্তুত করে। এটি মধ্যপ্রদেশের হোসাঙ্গাবাদ (Hoshangabad) এ অবস্থিত। যদিও সেখানে পুরো কাগজটার সামান্য একটুখানি অংশই তৈরি হয়।
আর বাকি ১৮ শতাংশ ইম্পোর্ট করা হয় UK, জার্মানি ও জাপান থেকে। আর টাকা ছাপানোর জন্য যে কালি ব্যবহার করা হয়, সেটি আসে ‘সিকপা’ (SICPA) থেকে। ‘সিকপা’ হলো সুইজারল্যান্ডের একটি কালি প্রস্তুতকারক কোম্পানি। ‘সিকপা’ শুধু ভারতকেই নয় পৃথিবীর অনেকগুলি বড় দেশকেও কালি সরবরাহ করে।
টাকা ছাপা হয় ভারতের মাত্র চারটি জায়গায়। এই গুলি হল মহারাষ্ট্রের নাসিক,পশ্চিমবঙ্গের শালবনি, কর্নাটকের মহীশূর ও মধ্যপ্রদেশের দেওয়াস।
টাকা ছাপার ক্ষেত্রে প্রথমে হোসাঙ্গাবাদ বা বিদেশ থেকে আসা কাগজকে একটা বড় রোলের মতো করে নেয়া হয়। এই রোল করা কাগজটিকে বলা হয় মাদাররোল। এই মাদারোলের ওপর অংশে ওয়াটার মার্ক দেওয়া হয়। আমাদের নোটের মধ্যে ওয়াটার মার্ক হিসাবে গান্ধীজীর ছবির অংশ দেওয়া আছে।
এরপর যেটা হয় সেটা হল ওই ওয়াটার মার্কের কিছু নমুনা নিয়ে চেক করা হয় যে সেটা ঠিকভাবে পড়ছে কি। তারপর সেই মাদারোল্ডটিকে তিন ভাগে ভাগ করে সেটির উপর ওয়াটার মার্ক মারা হয়। এরপর সেই কাগজের উপর হলোগ্রাম দেওয়া হয়। হলোগ্রমা হল টাকার মধ্যে হলুদ সবুজ বা গোল্ডেন কালারের যে তার গুলো লাগানো থাকে সেটিই হলোগ্রাম। এই হলোগ্রাম লাগানোর পর প্রতিটা সিটে ঠিকমতো ভাবে হলোগ্রাম বা ওয়াটার মার্ক পড়েছে কি, সেটা সঠিকভাবে চেক করে নেয়া হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে।
তারপর কিছু ইন্টারন্যাল প্রসেসের মধ্যে দিয়ে পেপার শীট গুলি যায়। প্রতিটি পেপার শীট থেকে ৩২ থেকে ৪৮ টা নোট ছাপানো যায়। আর এইটা পুরোটাই অটোমেটিকলি মেশিন দ্বারা চালিত করা হয়।
এরপর এটির কোয়ালিটি গুলি ইন্সপেকশন করা হয়। তারপর পেপার শীট টিকে স্লিস্কিন পেন্টিং এর জন্য পাঠানো হয়। স্লিস্কিন জিনিসটা হল টাকার মধ্যে যে ৫০ বা ১০০ এই সবুজ রঙের লেখা চিহ্ন দেখা যায় সেটি স্লিস্কিন পেন্টিং দ্বারা করা হয়। এরপর ইন্টাগ্লিও পেইন্টিং করা হয় টাকার উপর। ইন্টাগ্লিও পেইন্টিং দিয়ে ট্যাকচার করা হয় টাকার উপর। আমরা যখন টাকাকে আলোর মধ্যে ধরি তখন তার মধ্যে বা তার ভেতরে কিছু লেখা দেখতে পাই। যেটিকে খালি চোখে বা নরমাল ভাবে দেখতে পাই না, এইটা ঘটে ট্যাকচার প্রিন্টিং করা থাকে বলেই।
[আরো পড়ুন:👉 এলিয়েন আক্রমণ নেমে এল কি জাপানে ? সোশ্যাল মিডিয়ায় রাতের আকাশে আলোক স্তম্ভের এ ভাইরাল ছবি কিসের ?]
এরপর নোট পুরোপুরি ভাবে তৈরি হয়ে যায়। তারপরে এটিকে কাটা হয় কাটার মেশিনের দ্বারা। তারপর এই নোট গুলোর উপরে নাম্বর দেওয়া হয়। এই পুরো নোটগুলো কাটার সময় অনেক খারাপ নোট বের হয় যেগুলিকে বাতিল করে আলাদা করা হয়। একদম ভালো নোটগুলিকে প্যাকিং করে RBI এর মেইন ব্রাঞ্চে পাঠানো হয়। এই টাকা গুলি ছাপাতে মোট পরিমান টাকার ৪০ শতাংশ খরচ হয়ে যায়। অর্থাৎ, একটি ১০ টাকার নোট ছাপাতে খরচ হয় ১ টাকা ০১ পয়সা।
আমরা জানি যে ভারতবর্ষ একটি বড় দেশ তারপরও এই ছাপানো টাকাগুলি আমাদের হাতে কিভাবে আসে? এই ছাপানো টাকাগুলো RBI এর মেন ব্রাঞ্চ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা সাব ব্রাঞ্চ গুলিতে পাঠানো হয়। সেগুলি হল আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, ভোপাল, ভুবনেশ্বর, চণ্ডীগড়, চেন্নাই, দেরাদুন, গুয়াহাটি, হায়দ্রাবাদ, জয়পুর, জম্মু, কানপুর,কোচি, কলকাতা, লখনউ, মুম্বাই, নাগপুর, নতুন দিল্লি, পানাজি,পাটনা, পুনে, রায়পুর, রাঁচি,শিলং, সিমলা, শ্রীনগর, তিরুবনন্তপুরম। এখান থেকে লেনদেনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা পৌঁছে যায়।
Resource for this article, links are below👇
https://www.youtube.com/watch?v=_cUpeSJI-30
https://www.youtube.com/watch?v=8BUj4CEMHrU&t=183s
[আরো পড়ুন:👉 যখন সূর্যের থেকেও আকারে বড় এই তারাটি হারিয়ে যায় ! কি হয়েছিল আসুন জেনে নেওয়া যাক]
Leave a Reply