লন্ডন অ্যাকোয়ারিয়ামের গ্লাসের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, নিচে সাঁতার কাটছে হাঙর। স্কুলের ছুটির দিনে এই অ্যাকোয়ারিয়াম শিশুদের এবং তাদের পরিবারদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। এই অ্যাকোয়ারিয়ামে প্রবেশ করে দেখা মিলবে হাঙর, বড় বড় তারামাছ এবং বিভিন্ন রঙের সামুদ্রিক প্রবাল। যদিও অনেকেই জানেন না যে প্রবাল প্রকৃতপক্ষে উদ্ভিদ নয়, বরং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবের সমষ্টি।
প্রবালসমূহ সামুদ্রিক জীবনের ২৫% রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং কিছু প্রবাল প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রবাল এখন ঘোর বিপদের সম্মুখীন। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ২১০০ সালের মধ্যে প্রবাল সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হতে পারে। এটি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে প্রবালের সৌন্দর্য শুধু অ্যাকোয়ারিয়ামে দেখার সুযোগ দেবে, প্রকৃতিতে নয়।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের “দ্য ক্লাইমেট কোয়েশ্চেন” প্রোগ্রামের সঞ্চালক গ্রাহাহ জ্যাকসন এবং ক্যারোলাইন স্টিল প্রবালের বিশেষ জ্ঞান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রবালের রঙের রহস্য খোলাসা করতে গিয়ে জানা যায় প্রবাল নিজেই বর্ণহীন, তবে এর ভেতরে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শৈবালের কারণে প্রবাল বিভিন্ন রঙের দেখায়। এই শৈবালগুলো আলোকশক্তিকে খাবারে রূপান্তরিত করে প্রবালকে পুষ্টি সরবরাহ করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে, প্রবালের শৈবালগুলো প্রবাল ছেড়ে চলে যায়, ফলে প্রবাল ফ্যাকাশে হয়ে যায় যা কোরাল ব্লিচিং নামে পরিচিত। এই অবস্থা যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে প্রবাল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
সাধারণত প্রবালের বৃদ্ধির হার ধীর, তবে প্রজনন প্রকল্পগুলো এই প্রবালের বৃদ্ধি দ্রুততর করে তুলছে। ক্যারোলাইন স্টিল পুয়ের্তো রিকোতে এমন একটি প্রকল্প পরিদর্শন করেন যেখানে প্রবালকে ল্যাবে প্রজনন করিয়ে সাগরে পুনঃপ্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
এই সংরক্ষণ প্রচেষ্টা প্রবালকে রক্ষা করতে পারে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাই মূল সমাধান। অধ্যাপক ওভে হোগ-গুল্ডবার্গ বলছেন, “আমাদের দ্রুততার সাথে কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে এবং প্রবালের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”
[আরো পড়ুন:👉নিত্য পূজা সামগ্রী হিসেবে সবার বড়িতেই কর্পূর থাকে। কিন্তু কিভাবে এটি তৈরী করা হয় আসুন জেনে নেওয়া যাক]