উগান্ডার ১০ বছর বয়সী নাইম্বি মরিস সেই দিনটি কখনো ভুলতে পারে না যখন তার বাবা তাকে এবং তার মা ও ভাইবোনদের ফেলে চলে গিয়েছিলেন। তার পরিবারের ফার্মটি বন্যার কারণে ডুবে গিয়েছিল, যার ফলে তারা উগান্ডার কাম্পালা শহরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। নাইম্বি বলেন, “আমরা দুই দিন রাস্তায় ঘুমিয়েছিলাম, তারপর কাম্পালায় এসে সবকিছু ভেঙে পড়ে।”
নাইম্বির পরিবার হাজার হাজার মানুষের মধ্যে অন্যতম যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় এখন দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষকে তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে দিচ্ছে, যা সংঘর্ষ বা সহিংসতার কারণে সৃষ্ট বাস্তুচ্যুতির সংখ্যার চেয়েও বেশি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়লেও, অনেক ক্ষেত্রে তথ্য বিকৃতি ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এই অবস্থায় বিজ্ঞানীরা কি তাদের বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে পারছেন?
ফিবি এল হ্যানসন, যিনি সম্প্রতি স্কুল শেষ করেছেন, তিনি স্কুলে জলবায়ু পরিবর্তন শিক্ষা উন্নত করার জন্য একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন। তার উদ্যোগ “টিচ দ্য টিচার” ৮০টি স্কুলে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং ৫০০টিরও বেশি স্কুলে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি মনে করেন, শিক্ষকদের সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে তারা ছাত্রদের সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারবেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া মিথ্যা তথ্যের মোকাবিলা করতে পারবেন।
নাইম্বি মরিস এখন একটি অলাভজনক সংস্থা “আর্থ ভলান্টিয়ার্স” পরিচালনা করেন, যা তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্রিয় করতে কাজ করে। তারা ইতিমধ্যে ৫০,০০০ গাছ লাগিয়েছেন এবং ১৩,৫০০ শিক্ষার্থীকে সচেতন করেছেন। নাইম্বির লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫ মিলিয়ন তরুণকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্ত করা।
নাইম্বি বলেন, “আমাদের পরিস্থিতি নিয়ে যারা সন্দেহ প্রকাশ করে, তাদের বোঝা উচিত যে আমরা নিজেরাই আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারি। আমাদের স্কুলে ফিরে যেতে হবে এবং আমাদের সন্তানদের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।”
স্যার পল নার্স, যিনি একজন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী, মনে করেন যে জলবায়ু পরিবর্তন শিক্ষার জন্য বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস প্রয়োজন। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এখন স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি এবং শিক্ষার্থীদের নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস চিনতে সহায়তা করতে হবে।”
এটি একটি যৌথ উদ্যোগ যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সঠিক বিজ্ঞান যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং এটি মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুত করতে হবে।
—
*উৎস*: “দ্য ডকুমেন্টারি: হুজ ট্রুথ?” বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, নোবেল পুরস্কার আউটরিচ ও বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের যৌথ প্রযোজনা।
[আরো পড়ুন:👉দিল্লি বিমানবন্দরের ছাদ ধসে টার্মিনাল বন্ধ, অডিট চলছে এখনো!]
Leave a Reply