বজ্রপাত প্রকৃতির একটি অত্যাশ্চর্য এবং ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে বজ্রপাত হয় এবং এটি আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। এমনকি পৃথিবীর বাইরেও বজ্রপাত ঘটে, তাই পৃথিবীর সব মানুষ এবং বহির্জাগতিক প্রাণীরাও বজ্রপাত সম্পর্কে জানেন। তবে, আপনি কতটা জানেন বজ্রপাত সম্পর্কে? সচরাচর যে বজ্রপাত আমরা দেখে থাকি, তার বাইরেও আরও অনেক প্রকারের বজ্রপাত রয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা বিভিন্ন প্রকারের বজ্রপাত সম্পর্কে জানব।
সাধারণ বজ্রপাত
একটি বজ্রপাত সৃষ্টির জন্য মেঘের মধ্যে পজেটিভ এবং নেগেটিভ চার্জকে পৃথক হতে হয়। মেঘগুলি মূলত ক্ষুদ্র বরফ কণা এবং জলীয় বাষ্পের সমন্বয়ে গঠিত। ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবিধি মেঘের কণাগুলিকে সংঘর্ষ করায়। তথ্যের ভিত্তিতে বলা চলে উপরের দিকে উঠছে এমন জলীয় কণাগুলি থেকে নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রন নীচের দিকে পতিত ভারী কণাগুলিতে স্থানান্তরিত হয়। এর ফলে ঝড়ের সময় মেঘের নীচের অংশটি নেগেটিভ চার্জযুক্ত এবং উপরের অংশটি পজেটিভ চার্জযুক্ত হয়। এভাবে মাটি এবং মেঘের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় এবং বজ্রপাত ঘটে।
ভিন্ন ধরনের বজ্রপাত
বজ্রপাত বিভিন্ন প্রকারের রয়েছে। সাধারণত আমরা নেগেটিভ চার্জযুক্ত বজ্রপাতই বেশী দেখতে পাই, যেখানে মেঘ থেকে মাটিতে নেগেটিভ চার্জ প্রবাহিত হয়। তবে অনেক কম সময়ই পজেটিভ চার্জযুক্ত বজ্রপাতের প্রকাশ ঘটে। যেখানে মেঘের উপরের অংশ থেকে মাটিতে ধনাত্মক বা পজেটিভ চার্জ প্রবাহিত হয়। এ ধরনের বজ্রপাত মাটিতে পৌঁছানোর জন্য অনেক বেশি চার্জ প্রয়োজন এবং তাই তা অনেক বেশী শক্তিশালী হতে হয়।
অস্বাভাবিক বজ্রপাত
বজ্রপাতের আরও কিছু অস্বাভাবিক ধরন রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, “রেড স্প্রাইট” এবং “ব্লু জেট”। রেড স্প্রাইট সাধারণত মেঘের উপরের অংশে ঘটে এবং লাল আলোর ঝলক সৃষ্টি করে। ব্লু জেট মেঘের মধ্যে ধনাত্মক চার্জকে মুক্ত করতে উপরের দিকে চার্জ প্রবাহিত করে এবং নীল আলোর ঝলক সৃষ্টি করে।
আগ্নেয়গিরির বজ্রপাত
মাটি বা সমুদ্রের উপরে বজ্রপাতের মতোই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময়ও বজ্রপাত ঘটে। এটি “আগ্নেয়গিরির বজ্রপাত” নামে পরিচিত। অগ্ন্যুৎপাতের সময় বিশাল পরিমাণে ধূলিকণা আকাশে উঠে যায় এবং এই ধূলিকণাগুলি সংঘর্ষ করে বৈদ্যুতিক চার্জ সৃষ্টি করে। এভাবেই আগ্নেয়গিরির বজ্রপাত ঘটে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বজ্রপাতের প্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে। সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বজ্রপাতের তীব্রতা বাড়ছে। গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রের পিএইচ মান কমে যাওয়ার কারণে বজ্রপাতের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি জাহাজ, তেল রিগ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক কাঠামোর জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
লেজার গাইডেড বজ্রপাত
গবেষকরা বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন। যেখানে লেজারের সাহায্যে বজ্রপাতের দিক পরিবর্তন করার প্রয়াস করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বজ্রপাতকে নির্দিষ্ট স্থানে কেন্দ্রীভূত করা যেতে পারে, যা বিমান এবং রকেটের রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
বজ্রপাতের সাথে সরাসরি সংস্পর্শ
বজ্রপাতের সাথে সরাসরি সংস্পর্শে আসা একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ঘটনা। তবে, আশ্চর্যের বিষয় হল যে বজ্রপাতের শিকার হওয়ার পরেও অধিকাংশ মানুষ বেঁচে থাকে। বজ্রপাতের শিকার হলে শারীরিক এবং মানসিক অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ঘুমের সমস্যা এবং হতাশা।
বজ্রপাত প্রকৃতির এক বিস্ময়কর এবং ভয়াবহ দৃশ্য। এর পেছনের বিজ্ঞানের বিষয়গুলি জটিল এবং গবেষকরা এখনও এর অনেক দিক আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। বজ্রপাতের বিভিন্ন ধরন এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়গুলি জানার মাধ্যমে আমরা আরও সচেতন হতে পারি এবং আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি।
[আরো পড়ুন:👉 দুবাইয়ের গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার জন্য কী করতে হবে?]
Leave a Reply